সমস্ত লেখাগুলি

অভিনব মন -
মুনমুন পাত্র
Dec. 3, 2024 | রম্যরচনা | views:775 | likes:0 | share: 0 | comments:0

মায়ের মন সব সময় ছেলে মেয়ের কাছেই পরে থাকে, সকল সময় চিন্তা, কাছে থাকলেও, দূরে থাকলেও, ফোনটা করেই ফেলি, হয়তো ব্যস্ত, থাকুক ব্যস্ত, আমার মনটা কেমন করছ। কিরে কী করছিস, আমি তোমার কথাই ভাবছিলাম মা। মা তোমার রান্না হয়ে গেছে? আজকে রাত্রের খাবার, তোমার হাতের রান্নায় করব। হ্যাঁ হয়ে এসেছে রান্না। মা তোমাদের ওখানে সকলে এখন দুপুরের খাবার খাবে, আর আমি রাতের খাবার খাবো। কিন্তু একই সাথে। হ্যাঁ তুই হাতমুখ ধো, আর খাবার প্লেটগুলো সাজিয়ে রাখ। মা তুমিও খাও আজ আমার সাথে, এক সাথে খাবো আজ। তোর বাবার খাওা হয়নি, আচ্ছা ঠিক আছে, তুই আয়, হাতমুখ ধো। আমি খাবার ফাঠিয়ে দিচ্ছি। থেমার খাবার এসে গেছে, এসো একসাথে গল্প করতে করতে খাই, মা তোমার হাতের তৈরি এঁচোড়-এর তরকারি আমার খুব প্রিয় হয়েছে। যেটা পাঠিয়েছি তোর হবেতো? হ্যাঁগো মা, কাল কী খাবি বল? তৈরি করে রাখবো। নাগো মা, কালকে আমার ফিরতে আনেক দেরি হবে, বাইরে খেয়ে নেবো। কী হল তোমার মন খারাপ হয়ে গেলো, না মন খারাপ হয়নি, আমি ভাবছি অন্য কথা। কী কথা মা? তুই পৃথিবীর আর এক প্রান্তে আছিস, তোকে আমার হাতের রান্না খাওতে পারছি, গরম গরম খাবার, এবং তুই বলার সাথে সাথে এটাই অনেক। ঠিক বলেছ মা। জানিস খুব বেশি দিন আগে নয়, মানুষ এগুলো ভাবতেই পারতো না। মা তুমি যখন আমায় গ্লোব দেখাতে, আর বলতে – এই দেখ এটা আমারিকা এখানে, এখন রাত আর আমাদের এখানে দিন। আমি অবাক হয়ে শুনতাম। মা তুমি বলতে মাঝে আছে অনেক সমুদ্র। কিন্তু টেকনোলজির জন্য তোমার হাতের রান্না খেতে পাচ্ছি। মা আমাকে একটা ডিম ভেজে দাও। হ্যাঁ দিচ্ছি, গল্প করতে করতে খা, মা জানো ‘অভিনব মন’ বলে একটা যন্ত্র আবিষ্কারের প্রচেষ্টা চলছে। সেটা কী আবার, মা দারুন হয়েছে ডিম ভাজা। মা তুমি বলতে দিদুনদির বিয়ের পর খবর আনার জন্য লোক পাঠাতো, তবে খবর পেতো। হ্যাঁ রে, একই জেলায় তাও। কতদিন আর আগেকার কথা। মা আমাদের ছোট ভিডিও কল করে যখন দিদুনদির ছবি দেখতে পেতাম, তখন দিদুনদির কী আনন্দ হতো। আর বলতো বিজ্ঞানের আর্শীবাদ। আর এখন যদি দেখতে পেতো তুমি ডিম ভেজে সাত সমুদ্র তেরো নদীর পারে ছেলেকে গরম গরম খেতে দিচ্ছো তাহলে কি বলতো সেটা ভেবেই আমার মনটা আনন্দ হচ্ছে। ‘অভিনব মন’ কী বল। এই যন্ত্রটা য়দি তোমার মাথায় ঠেকনো হয় তাহলে এই মুহূর্তে তুমি কী ভাবছো ধরা পড়বে। এতে অপরাধীদের ধরা খুব সহজ হবে, সমাজে অপরাধ প্রবণতা কমবে। কিন্ত তোদের এই যন্ত্রটা আমার ঠিক পছন্দ হল না। কেন মা?  মনতো কল্পনার ডানায় ভর করে পারি দেয় দূর দেশে, যন্ত্র কী করে মনের খবর রাখবে। মনকে বোঝার ক্ষমতা থাকেনা। জানিস একসাথে অনেকদিন কাটানো মানুষগুলোও একে অপরের মনকে সঠিক করে বুঝতে পারে না।  তাই তো সম্পর্কগুলো কেমন যেন এলোমোলো হয়ে যায়। মা ধরো তোমার কাছে যন্ত্রটা আছে, তোমার সম্পর্কে কোন মানুষ এরকম ভাবে তা যন্ত্রে ধরা পড়বে, তুমি মানুষ চিনে মিশবে। ওরে যন্ত্র দিয়ে মানুষ চিনবে কিরে তাহলে পরস্পর ভালোবাসার সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাবে। নাগো মা, তুমি এই ভাবে ভাবছো কেনো? কত বড়ো ধরনের বিপদ থেকে দেশ বাঁচবে। কিজানি, মনের খবর রাখার যন্ত্র যদি আবিষ্কার হয় তাহলে মানুষের নিজস্বতা, শিল্পীসত্তা কমে হারিয়ে যাবে। সেটা কীরকম মা? পূর্ণিমার ভরা জোয়ারের উত্তাল সমুদ্র দেখা দৃশ্য সবার চোখে সমান ভাবে কি ধরা দেবে, শধু তাই নয় আমি কার সাথে সমুদ্র দেখছি সেটার উপর নির্ভর করে, দেখার দৃষ্টি বদলে যায়। তোদের যন্ত্রে সেটা ধরা পড়বে? আজকে আমি যে ঘটনাকে দেখলাম, যে দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে বিচার করলাম, দশ বছর পর সেই আমি সেই ঘটনাকে অন্যরকম দৃষ্টিভঙ্গীতে দেখলাম। তাই তোর যন্ত্র কীকরে মানুষের মন চিনে মানুষকে মিশতে সাহায্য করবে। মা বিজ্ঞান এগিয়ে চলে বিজ্ঞানের নিয়মে, ‘অভিনব মন’ এগিয়ে চলবে তার নিয়মে। তবে তুমি যেভাবে ভাবছো তা ঠিক, এই যে আমি এই যন্ত্র নিয়ে অনেকের সাথে কথা বলেছি তাদের মতামত আলাদা। হ্যাঁ ঠিকই তো, মন বলে কথা। মা তুমি অতো দুর থেকে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আমার কাছে পৌঁছে যেতে পারো আর আমার মাথায় হাত বুলিয়ে গল্প বলে ঘুম পারিয়ে দিয়ে ফিরে যেতে পারো এই রকম একটা যন্ত্র আবিষ্কার হলে কেমন হয়? খুব ভালো। আমাদের মতো মায়েরা তার অপেক্ষায় রয়েছে। দূর হয়ে উঠবে আরো কাছে, তারপর আরো কাছে, আরো কাছে।

পু়রশুড়া,  হুগলি

শ্যামপুর এম কে প্রাথমিক বিদ্যালয় (সহ শিক্ষিকা)



আমাদের কথা


এই দুর্নিবার সময়েও লেখনী চালিয়ে যাওয়ার মত ধীশক্তি ধরে রেখে মুক্তচিন্তকরা নিরন্তর লিখে চলেছেন। তাঁদের লেখাগুলি সংকলিত করে প্রকাশিত হয়ে চলেছে চেতনার অন্বেষণে পত্রিকা। যা দুই বাংলার পাঠকদের কাছে দ্রুত সমাদৃত হয়। এই পথ চলার একটি ধাপে এসে অন্বেষণ পাবলিশার্স পথ চলা শুরু করেছে মূলত মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক বইগুলিকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে। আমাদের কথা বলতে লেখক, পাঠক সবাই মিলিয়েই আমরা।

ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে


এটি মূলত বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদ চর্চা এবং বইপত্রের প্ল্যাটফর্ম। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তিবাদীদের লেখার চর্চাকে অনুপ্ররণা যোগাবে। লগইন করে আপনিও লিখতে পারবেন, ওয়েবসাইটটি সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত।

যোগাযোগ


Email: yuktibadira@gmail.com

WhatsApp: +91-9433794-113


Website visit count:
86929